মানব চরিত্রের ইতিবাচক পরিবর্তনের নাম শিক্ষা। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের সম্ভাবনাময় আত্মাকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে মহান স্রষ্টার সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর দৃষ্টিতে: (Education is the reawakening of the soul from its dormant position). আত্মার ঘুমন্ত অবস্থা থেকে পুনরায় জাগিয়ে তোলার নাম হলো শিক্ষা। সে জ্ঞান অর্জনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে নির্দিষ্ট কিছু অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘনিষ্টতম সম্পর্ক যার মাধ্যমে গড়ে ওঠে শিক্ষা প্রক্রিয়ার সফলতম ধারা।
জ্ঞান অর্জনের অপরিহার্যতা: (Significance of Acquiring Knowledge)
ইসলাম শব্দের অর্থ আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ। তাই প্রতিটি মুসলিম কার আনুগত্য করবে, কীভাবে আনুগত্য করবে এবং কী কী কাজ থেকে বিরত থাকবে তা জানার জন্য ইল্ম বা জ্ঞানের প্রয়োজন। এ জন্যই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নবুওয়াতের সূচনাতেই সর্বপ্রথম যে আয়াতগুলো হেরা গুহায় নাযিল করেন তাতে ইল্ম এর গুরুত্ব প্রকাশ পায়। আল-কুরআনে এরশাদ হচ্ছে:
اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ﴿1﴾ خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ ﴿2﴾ اِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ ﴿3﴾ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ﴿4﴾ عَلَّمَ الْإِنسَانَ
مَا لَمْ يَعْلَمْ ﴿5﴾ ف
পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আর আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব ৯৬ ঃ ১-৫)
এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে :
ক. মহান ¯স্রষ্টার সর্বপ্রথম নির্দেশ হচ্ছে- اِقْرَأْ বা পড়।
খ. ‘জমাট রক্তের’ মত সাধারণ ও তুচ্ছ বস্তু থেকে ‘মহিমান্বিত প্রতিপালক’-এর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে জ্ঞানসাধনাকে সেতুবন্ধন বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
গ. ‘কলম’-এর সাহায্যে তিনি মানব জাতিকে জ্ঞান দান করেছেন।
এই প্রথম প্রত্যাদেশ থেকেই ইল্মের ফযীলত সুস্পষ্ট।
অন্যত্র আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন :
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? (সূরা যুমার-৩৯:৯)
অন্য আয়াতে উল্লেখ রয়েছে :
يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নীত করবেন। (সূরা মুজাদিলা ৫৮: ১১)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ – وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا – وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। (সূরা বাকারা-২:২৬৯)
নবী কারীম (সাঃ)-কে কিতাব ও হিকমত দানের মাধ্যমে তাঁকে যে মর্যাদা দান করা হয়েছিল সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ
আল্লাহ্ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা নিসা ৪ : ১১৩)
নবী করীম (সাঃ) এর হাদীসে বক্তব্যটি এভাবে রয়েছে :
من يرد الله به خيرا يفقهه في الدين، وإنما أنا قاسم والله يعطي
আল্লাহ্ যার মঙ্গল কামনা করেন তাকে দ্বীনের বূৎপত্তি দান করেন। বস্তুত আমি বন্টনকারী এবং দাতা হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা। (বুখারী-৭১)
মানব জাতির চরম উৎকর্ষ সাধনকারী ইসলাম। তাই প্রতিটি মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জনকে ফরয ঘোষণা করেছেন । রাসূলুল্লাহ্ সাঃ ইরশাদ করেন :
طلب العلم فريضة على كل مسلم
ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয। (ইবনে মাজা-২২৪)
আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে হলে অবশ্যই ইলম অর্জন করে তাঁর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির ব্যাপারসমূহ জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর এ উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি জ্ঞানান্বেষণে রত থাকে, আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা যে কত বেশী নিম্নের বর্ণিত হাদীসটি তার প্রমাণ।
হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেন :
وَعَنْ أَبي الدَّرْداءِ، قَال: سمِعْتُ رَسُول اللَّهِ ﷺ، يقولُ: منْ سَلَكَ طَريقًا يَبْتَغِي فِيهِ علْمًا سهَّل اللَّه لَه طَريقًا إِلَى الجنةِ، وَإنَّ الملائِكَةَ لَتَضَعُ أجْنِحَتَهَا لِطالب الْعِلْمِ رِضًا بِما يَصْنَعُ، وَإنَّ الْعالِم لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ منْ في السَّمَواتِ ومنْ فِي الأرْضِ حتَّى الحِيتانُ في الماءِ، وفَضْلُ الْعَالِم عَلَى الْعابِدِ كَفَضْلِ الْقَمر عَلى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ، وإنَّ الْعُلَماءَ وَرَثَةُ الأنْبِياءِ وإنَّ الأنْبِياءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلا دِرْهَمًا وإنَّما ورَّثُوا الْعِلْمَ، فَمنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحظٍّ وَافِرٍ. رواهُ أَبُو داود والترمذيُّ.
আমি রাসূল সাঃ-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের লক্ষ্যে পথ চলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দিবেন। তালিবে ইলম (শিক্ষার্থী) এর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরিশ্তাগণ তাঁদের ডানা তাঁদের জন্য বিছিয়ে দেন। আর আলিম-এর জন্যে আসমান যমীনের সবকিছু ক্ষমা প্রার্থনা করে । এমন কি পানির মাছও । আবিদ ব্যক্তির তুলনায় আলিমগণের মর্যাদা ঠিক সেরূপ যেমনটি পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা সমস্ত তারকার তুলনায়। আলিমগণ হচ্ছেন নবীগণের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ কাউকে দীনার ও দিরহামের উত্তরাধিকারী করে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকারী করেন ইল্মের । যে ব্যক্তি তা অর্জন করল সে প্রভূত কল্যাণ লাভ করল।
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে :
أفضل الأعمال العلم بالله، إن العلم ينفعك معه قليل العمل وكثيره، وإن الجهل لا ينفعك معه قليل العمل ولا كثيره
সর্বোচ্চ আমল হচ্ছে আল্লাহ বিষয়ক ইলম। নিঃসন্দেহে ইলম তোমার উপকারে আসবে চাই তার সঙ্গে অল্প আমল হোক বা অধিক আমল হোক আর অজ্ঞতা তোমার কোনও উপকারে আসবে না, চাই তার সাথে অল্প আমলই থাক বা অধিক আমলই থাক।
জ্ঞানের উৎস : (Sources of Knowledge)
১. ওহী ভিত্তিক জ্ঞান : (Divine Knowledge)
আল্লাহ্ তা’আলার গুণবাচক নামসমূহের অন্যতম হলো عليم وحكيم (আলীমুন ও হাকীম) তিনি সর্বজ্ঞ এবং প্রজ্ঞাবান। কুরআন শরীফের অসংখ্য স্থানে তাঁর এ দুটি গুণবাচক নামের উল্লেখ রয়েছে। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ইলম বা জ্ঞানের প্রকৃত উৎস হচ্ছেন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিজে। তিনি দয়া করে যাকে যতটুকু ইলম দান করেছেন সে ততটুকু জ্ঞানই লাভ করেছে।
তাই সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম আঃ এর জ্ঞান সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন।
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا
তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিয়েছেন (সূরা বাকারা ২: ৩১)
বলাবাহুল্য, বস্তুসমূহের নামই নয়, এগুলোর বস্তুগুণ এবং বৈশিষ্ট্যসমূহই আল্লাহ্ শিক্ষা দিয়েছেন বলে তাফসীর গ্রন্থসমূহে উল্লেখিত হয়েছে।
[দ্রঃ বয়ানূল কুরআন, হযরত আশরাফ আলী থানবী; তাফসীরে উসমানী; মা’আরিফুল কুরআন, মুফ্তী মুহাম্মদ শফী (রঃ)]
তারপর আল্লাহ্ তা’আলা যখন ফিরিশ্তাগণকে সে সব বস্তুর নাম বলতে আদেশ করলেন, তখন তাঁরা যে জবাব দিয়েছিলেন তা থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, সকল জ্ঞানের উৎস হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা । তাঁরা বলেছিলেন ঃ
قَالُواْ سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَآ إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَآ – إِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْحَكِيمُ
অর্থাৎ: তারা বলল, আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো আর কোন জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাকারা ২:৩২)
সূরা আলে ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ্ প্রদত্ত কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা লাভের পূর্বে মানুষ স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল। ইরশাদ হয়েছে
لَقَدْ مَنَّ ٱللهُ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُواْ عَلَيْهِمْ ءَايٰتِهِ-وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَابَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِى ضَلٰلٍ مُّبِينٍ
অর্থাৎ আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৬৪)
ইলম বা জ্ঞানের প্রকৃত উৎস হচ্ছে ওহী বা আল্লাহ্ তা’আলার প্রত্যাদেশ। এই ওহীর মাধ্যমেই যেহেতু জানিয়ে দেয়া হয়েছে … وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ এবং তিনি মনগড়া কথাও বলেন না। (সূরা নাজম ৫৩ : ৩)
এবং আল্লাহ তা’আলা এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন।
وما آتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا
রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর, ৫৯ :৭)
সুতরাং নবী কারীম (সাঃ) তাঁর হাদীসের মাধ্যমে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাও ওহীভিত্তিক। ইলম হাদীস বিশারদগণ তাই হাদীসকে ওহীয়ে গায়রে-মাতলূ’ নামে অভিহিত করেন।
কুরআন এবং হাদীসের এই ওহীভিত্তিক জ্ঞানসম্ভার থেকে যাঁরা সরাসরি উপকৃত হয়ে নিজেদেরকে আকাশের নক্ষত্রসম আলোর দিশারীরূপে গড়ে তোলার সূবর্ণ সুযোগ লাভ করেছিলেন সেই সাহাবায়ে কিরামের নিকট থেকে যে ইল্ম বা জ্ঞানসম্ভার পাওয়া যায় তাও নির্ভরযোগ্য ইলম। তাই বিশ্বখ্যাত ইসলামী মনীষী ইমাম আওযায়ী (রঃ) তাঁর শাগরিদ বাকিয়্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
يا بقية العلم ما جاء عن أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم وما لم يجئ عنهم فليس بعلم
হে বাকিয়্যা! জ্ঞান হচ্ছে তাই যা মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাহাবীগণের নিকট থেকে অর্থাৎ তাঁদের মাধ্যমে এসেছে। আর যা তাদের থেকে আসেনি তা কোনো শিক্ষাই নয়।
এই জ্ঞানই হচ্ছে মানুষের জীবনের দিক দিশারী ও পরকালের সম্বল। এই জ্ঞানের দ্বারাই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির ব্যাপারসমূহ জানা যায় এবং সে মতে আমল করে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মঙ্গল লাভ করা যায়। এ জন্যেই ওহীভিত্তিক ইলমের অধিকারীগণকেই আলিমরূপে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এরাই মহানবী (সাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’ বা নবী-রাসূলগণের উত্তরাধিকারী। মানব জাতির হিদায়াতের গুরু দায়িত্ব এই ওহীভিত্তিক জ্ঞান এবং তার আলিমগণের সাথেই সম্পৃক্ত। পার্থিব সুখ সম্ভোগ বা চাওয়া পাওয়া নয়; মানুষের নৈতিক উন্নতি এবং পরলৌকিক পরিত্রাণই তাঁদের গবেষণা ও সাধনার বিষয়বস্তু। দুনিয়া হাসিল করা এই জ্ঞানের উদ্দেশ্য নয়। এ প্রসঙ্গে নবী করীম (সাঃ) এর স্পষ্ট সতর্কবাণী রয়েছে, তিনি বলেন, ‘আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে জ্ঞান হাসিল করা হয় তা যদি কেউ পার্থিব কোন স্বার্থ হাসিলের জন্যে অর্জন করে তাহলে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না’।
২. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান: (Perceptive and Intellectual Knowledge)
পক্ষান্তরে আরও কিছু বিদ্যা আছে যা মানুষ তার ইন্দ্রিয় শক্তি, বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা অর্জন করে থাকে। এগুলোকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। বস্তুত: মানুষের এ জ্ঞান অতি সীমাবদ্ধ। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
এবং তোমাদেরকে খুব সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭: ৮৫)। মানুষের ইন্দ্রিয়ের শক্তি যেহেতু খুবই সীমাবদ্ধ, তাই তার জ্ঞানও একান্তই সীমাবদ্ধ।
ইসলামী শিক্ষার প্রকারভেদ: (Classification of Islamic Knowledge)
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয হলেও সকল জ্ঞান অর্জন কিন্তু এক পর্যায়ের ফরয নয়। বরং এর বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। সে হিসাবে ইল্ম তথা জ্ঞান তিন পর্যায়েরঃ
১. ফরযে আইন: (Mandatory for Everyone)
দ্বীন সম্পর্কীয় অত্যাবশ্যকীয় বিষয়াদির জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন, যা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। এ পর্যায়ে রয়েছে, ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদাসমূহ শিক্ষা করা অর্থাৎ যে সমস্ত আকীদা পোষণ করা ছাড়া কোন ব্যক্তিকে মুসলমান বলা চলে না। সেই বিশ্বাসাবলীর জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। ঈমানে মুফস্সালে এসব বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
آمنت بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت
আমি ঈমান আনলাম : ১. আল্লাহ্র প্রতি, ২. তাঁর ফিরিশ্তাগণের প্রতি, ৩. তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, ৪. তাঁর রাসূলগণের প্রতি, ৫. আখিরাতের প্রতি, ৬. তাকদীরের ভালমন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়; এর প্রতি, ৭. মৃত্যুর পর পূনরুত্থানের প্রতি।
কুরআন শরীফের সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ রুকূতে এবং অন্যান্য সূরায় এ বিশ্বাসসমূহের বর্ণনা রয়েছে। উপরোক্ত বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন।
অনুরূপ পবিত্র-অপবিত্র বিষয়ের বিধিবিধান জানা, নামায-রোযাসহ অন্যান্য ফরয-ওয়াজিব ইবাদত এবং হারাম ও মাকরূহ বিষয়সমূহ সম্পর্কে ইল্ম হাসিল করা ফরজে আইন। হাজ্জ যার উপর ফরয তার জন্যে হাজ্জের মাস্আলা জানা, বেচা-কেনা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানায় নিয়োজিত ব্যক্তি তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা এবং বিবাহ শাদীর উদ্যোগ গ্রহণকারীর জন্য বিবাহ ও তালাক সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন।
পক্ষান্তরে, গর্ব-অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা, দুনিয়ার মোহ ইত্যাদি কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক হারাম। এসব বিষয়ের স্বরূপ ও প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া গ্রহণীয় বিষয়সমূহ অর্জন করা এবং হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। এ সকল বিষয়ের উপরই ইল্মে তাসাওউফের ভিত্তি যা শিক্ষা করা সকলের জন্য ফরযে আইন।
২. ফরযে কিফায়া: (Mandatory for Few)
যে সমস্ত জ্ঞান জরুরী বটে, কিন্তু সকলের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অর্জন করা আবশ্যক নয়, সমাজের এক শ্রেণী বিশেষভাবে তা অর্জন করলেই গোটা সমাজ দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। এই জ্ঞানকে ফরযে কিফায়া পর্যায়ের ইল্ম বলা হয়ে থাকে।
মুফতী মোহাম্মদ শফী (রঃ)-এর ‘তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন’ গ্রন্থে ফরযে কিফায়া ইল্মের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে: গোটা কুরআন মজীদের সম্পূর্ণ অর্থ জানা এবং কুরআনে বর্ণিত সকল বিষয়াদি অনুধাবন করা, সমুদয় হাদীসের মর্ম উপলদ্ধি করা, হাদীস শাস্ত্রের বুৎপত্তি অর্জন এবং কুরআন ও হাদীসের আলোকে গৃহীত বিধানাবলীর জ্ঞান লাভ করা এতো ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে, গোটা জীবন ব্যয় করেও এতে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তাই ইসলামী শরী’আতে একে ফরযে কিফায়া বলে গণ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লোক এ জ্ঞান অর্জন করে নিলেই অন্যান্যরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান প্রভৃতিও এ পর্যায়ে পড়ে। সমাজের একাংশ এ বিদ্যা অর্জন করলেই গোটা সমাজ এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। মু’আমালাত, অসিয়্যত ও ফারাইয বা উত্তরাধিকার বন্টনের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যাও এ পর্যায়েরই ইল্ম।
৩. নফল জ্ঞান: (Optional Knowledge)
নফল শব্দের অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত। শরী’আতের দৃষ্টিতে ফরয, ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যক পর্যায়ের নয়, অথচ এর বিনিময়ে সাওয়াব লাভ হয়, এগুলোর ইল্ম হাসিল করা নফল। নফল ইবাদত সম্পর্কে ইল্ম অর্জন করা এ পর্যায়েরই অন্তর্ভুক্ত। কথাটি এভাবেও বলা যায় যে,ফরয সংক্রান্ত বিষয়াদির ইল্ম হাসিল করা ফরয। ওয়াজিব সংক্রান্ত বিষয়াদির জ্ঞান অর্জন করা ওয়াজিব আর নফল সংক্রান্ত বিষয়াদির জ্ঞান অর্জন করা নফল।
বর্জনীয় বিষয় : (Exclusionary Issues)
বিদ্যা নামে কিছু কিছু বিষয় এমনও আছে যেগুলো মানবাত্মা তথা মানবজাতির জন্যে রীতিমত ক্ষতিকর। অশ্লীল শিক্ষা ও সাহিত্য-অপসংস্কৃতি, যাদু-টোনা, ভবিষ্যৎবাণী, কূটতর্ক ইত্যাদি এ পর্যায়ে পড়ে।
১. অশ্লীল সাহিত্য: (Vulgar Literature)
লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ। কিন্তু এমনকিছু বই পত্র ও পত্রিকা ম্যাগাজিন রয়েছে যেগুলোতে অশ্লীল কথাবার্তা ও কুরুচিপূর্ণ ছবিতে ভরপুর। এগুলোকে ইংরেজীতে ‘পর্ণোগ্রাফী’ বলা হয়ে থাকে। কোমলমতি বালক-বালিকাদের সুকুমার বৃত্তিসমূহের বিকাশের সহায়ক হওয়ার পরিবর্তে এগুলো তাদেরকে অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দেয়। অধুনা সিনেমা, ভিসিআর, ডিশ এন্টিনা, ওয়াইফাই, ওয়াইমেক্স এবং ইন্টারনেটের সুবাদে বিদেশী ন্যাক্কারজনক যৌনতাপূর্ণ ব্ল ফিল্ম মহামারীর মত কিশোর-কিশোরীদের চরিত্র বিনষ্ট করছে। সাহিত্য ও প্রচার মাধ্যমগুলো বিজ্ঞানের নিত্য নতুন উপায় উপকরণের মাধ্যমে সুসজ্জিত হয়ে পূর্বের তুলনায় শত সহস্রগুণে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকে নীতি নৈতিকতার পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। আপত্তিকর কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাসের সাহায্যে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইসলামী জীবনবোধ ও ঈমান আকীদা সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলা হচ্ছে। যে সমস্ত সাহিত্যকর্ম আমাদের তরুণ-তরুণীদেরকে বিপথগামী ও হীনমন্যতাগ্রস্ত করে তোলে, এগুলো অবশ্যই বিষতুল্য পরিত্যাজ্য। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে :
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মান্তিক শাস্তি এবং আল্লাহ্ জানেন, তোমরা তা জান না। ( সূরা নূর ২৪:১৯)
২. জাদু- টোনা, ভবিষ্যত গণনা: (Black Magic and Predicting)
যাদু-টোনা এমন অদ্ভুত কর্মকা-, যাতে কুফ্র, র্শিক এবং পাপাচার অবলম্বনে জিন্ ও শয়তানকে সন্তুষ্ট করে তাদের সাহায্য নেওয়া হয় এবং মানুষের ক্ষতিসাধন করা হয়। এ জাতীয় জাদু- টোনা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কুরআন শরীফে জাদু-টোনাকে অনিষ্টকর বিদ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ বিসম্বাদ সৃষ্টি ও তাদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য বিনষ্ট ছাড়া কোন কল্যাণ সাধিত হয় না। (সুরা বাকারা ২:১০২)
হাদীস শরীফে একে ধ্বংসাত্বক কাজ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার মাধ্যমে বা হাতের রেখার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎবাণী করা শরী’আতের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কেননা ভবিষ্যতের নিশ্চিত জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই রয়েছে। এজন্যই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন :
من أتَى عرَّافًا فسأله عن شيء، فصدَّقه لم تُقْبَلْ له صلاةٌ أربعينَ يومًا
যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন কিছু জানতে চায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না।
অন্য একটি হাদীসে উল্লেখ রয়েছে :
المنجِّمُ كاهنٌ، والكاهنُ ساحرٌ، والساحرُ كافرٌ
জ্যোতিষী হলো গণক আর গণক হলো যাদুকর এবং যাদুকর হলো কাফের। তাই জ্যোতিষী বা গণকের কাছে যাওয়া এবং তাদের ভবিষ্যতবাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমান পরিপন্থি কাজ। সকল মু’মিনের এ কাজ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
৩. কূটতর্ক: (Unnecessary Debating)
কূটতর্কে লিপ্ত হওয়া নিন্দনীয় ও দূষণীয় কাজ। এতে সত্য উদ্ঘাটিত হওয়ার পরিবর্তে মানুষের মনে জেদের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। জেদের বশবর্তী হয়ে মানুষ প্রতিপক্ষকে জব্দ ও হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়। পরিণামে মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-কলহের সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ¦-কলহ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট খুবই অপছন্দনীয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا – بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
তারা শুধু বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য তোমার সামনে এ উদাহরণ পেশ করেছে। সত্যকথা হলো, এরা কলহ প্রিয়। (সূরা আয যুখরুফ-৫৮)
বাক-বিতন্ডাকারী ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট অত্যধিক অপছন্দনীয়। কাজেই অহেতুক কূটতর্ক ও ঝগড়া বিতন্ডা থেকে সকলেরই বিরত থাকা একান্ত অপরিহার্য।
জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে পরিবেশের গুরুত্ব : (Importance of the Academic Environment)
জ্ঞান অর্জনের ব্যপারে অনুকূল পরিবেশ একটা মৌলিক বিষয়। জ্ঞান অর্জনে সফলতা লাভের জন্য পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পরিবারে যেমন জ্ঞানার্জনের অনুকূল নিরিবিলি পরিবেশের প্রয়োজন, তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কোলাহলময় স্থান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব বিদ্যা অর্জনের পথে বিরাট অন্তরায়। উপযুক্ত শিক্ষক, সহায়ক পুস্তকসমৃদ্ধ পাঠাগার ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থীদের জন্য সহজলভ্য করতে হবে। বাড়িতে অভিভাবকগণকে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাসে শিক্ষকমন্ডলী এবং ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষকে এদিকে যথেষ্ট মনোযোগী থাকতে হবে।
শৈশবকাল থেকেই শিশুদেরকে সুশিক্ষা প্রদানের প্রতি যত্মবান হতে হবে। এ সময়ের শিক্ষাই তার ভবিষ্যৎ জীবনের দিক দিশারী হিসাবে কাজ করে। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ইরশাদ করেন।
مثل الذي يتعلم العلم في صغره كالنقش على الحجر، ومثل الذي يتعلم العلم في كبره كالذي يكتب على الماء
যে ব্যক্তি ছোট বেলায় শিক্ষা অর্জন করে তা যেনো পাথরে খোদাই করার মত। আর যে বৃদ্ধ বয়সে শিক্ষা অর্জন করে তা পানির উপরে লেখার মত।
অন্য স্থানে নবী করিম সা: বলেন:
تناصحوا في العلم، فإن خيانة أحدكم في علمه أشد من خيانته في ماله، وإن الله سائلكم يوم القيامة
শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে উপদেশ দিবে। কেননা সম্পদের খিয়ানতের তুলনায় জ্ঞানের খিয়ানত মারাত্মক দোষের বিষয়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
শিক্ষার্থীদের মেধা ও চারিত্রিক গুণাবলীর উপযুক্ত মূল্যায়ন করতে হবে। এ ব্যাপারে সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদেরকে উৎসাহিত করার পরিবেশ তৈরী করতে হবে। যথাসময় পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ এবং মেধাভিত্তিক পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বিদ্যমান না থাকলে মেধাবী শিক্ষার্থী এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীও শিক্ষাক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অবদান রাখতে সক্ষম হবে না।
রাজনৈতিক কোন্দল, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে মুক্ত রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষা ও পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে সহশিক্ষার পরিবর্তে ছেলেমেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয় । যৌবনের প্রারম্ভে সহশিক্ষার কুপ্রভাবে প্রায়শই ছেলেমেয়েদের চারিত্রিক স্খলন ঘটে। শিক্ষার পরিবেশকে এ অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখা অবশ্য কর্তব্য। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা অত্যাবশ্যক। উপরোক্ত বিষয়াদির ব্যাপারে যত্মবান হলে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় থাকবে।
শিক্ষকের চারিত্রিক গুণাবলী ও শিক্ষাদান পদ্ধতি (Characteristics of Teachers and Teaching Methodology)
শিক্ষকের উচ্চ ব্যক্তিত্বের দ্বারা শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই প্রভাবিত হয়ে থাকে। তাই শিক্ষককে উন্নত চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে।
শিক্ষকের ভাষা সাবলীল, উচ্চারণ সুস্পষ্ট এবং বর্ণনাভঙ্গি শিক্ষার্থীদের জন্য চিত্তাকর্ষক হওয়া চাই। রাসূলুল্লাহ্ সাঃ) বলেন: انما بعثت معلما আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন أنا أفصحكم আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক প্রাঞ্জলভাষী।
শ্রোতাদের বোঝার সুবিধার্থে তিনি এক একটি কথা অনেক সময় তিনবার করে উচ্চারণ করতেন। আর সে যুগে শিক্ষাদান কর্ম পরিচালিতই হতো বক্তিতা ও ভাষণের মাধ্যমে। হাদীসের সুবিশাল জ্ঞান ভান্ডার মূলত মৌখিক বক্তিতা ভাষণের মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছিল।
শিক্ষক যে বিষয়ে শিক্ষাদান করবেন, সে বিষয়ে তিনি প্রথমে ভালভাবে জ্ঞান আহরণ করে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সুবিন্যস্ত আকারে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করবেন। শিক্ষার্থীগণ তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবে। এতে শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনে উচ্চধারণা সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষক তাঁর বক্তিতার মধ্যে কোন কোন সময় শিক্ষার্থীদেরকে তার বক্তব্য বিষয় তারা কতটুকু উপলদ্ধি করতে পেরেছে তার পরীক্ষা স্বরূপ প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থা করবেন। এতে ছাত্র ও শিক্ষকের দূরত্ব অনেকটা কমে আসে এবং একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এটা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান লাভের সহায়ক হয়ে থাকে।
শিক্ষকের কোন বক্তব্য শিক্ষার্থীর কাছে অস্পষ্ট মনে হলে নির্দ্বিধায় শিক্ষককে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করে তার জ্ঞাতব্য বিষয় জেনে নেবে।
এ প্রসঙ্গ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন:
فإنَّما شِفَاء العِيِّ السؤال
“ অজ্ঞতার প্রতিষেধক হচ্ছে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া”। তবে শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞাসা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদব-কায়দার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। তার উদ্দেশ্য একান্তই জ্ঞান লাভ হতে হবে। উস্তাদকে বিব্রত করা বা নিজের বাহাদুরী দেখানো নয়। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সাহাবায়ে কিরামকে অনেক সময় ভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে তাদের আগ্রহ ঔৎসুক্য জাগিয়ে তুলতেন। আবার সাহাবায়ে কিরামও বিভিন্ন বিষয় নির্দ্বিধায় তাঁর কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতেন ।
শিক্ষকের বর্ণনাভঙ্গি আকর্ষণীয় হলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষণীয় বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠে। এ জন্যে শিক্ষাদানকালে শিক্ষকের বর্ণনা যাতে চিত্তাকর্ষক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। শিক্ষণীয় বিষয়ের মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়াদির অবতারণা যেন মূল বিষয়কে শিক্ষার্থীদের মানসপট থেকে আড়াল করে না দেয় সেদিকে শিক্ষককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাদান কালে হাতে-কলমে (Practical) শিক্ষাদানের গুরুত্ব অত্যধিক। তাই এ সময়ে শিক্ষক যথাসাধ্য শিক্ষার্থীদেরকে হাতে-কলমে শিক্ষাদানের চেষ্টা করবেন। শ্রেণীকক্ষে বড় আকৃতির হোয়াইটবোর্ড থাকবে এবং প্রয়োজনমত শিক্ষক নিজে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো বা তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ লিখে দিবেন। মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের দ্বারাও লেখাবার বা অঙ্ক কষাবার চেষ্টা করবেন। শিক্ষার্থী কোথাও আটকে গেলে নিজে সাহায্য করবেন। এভাবে শিক্ষণীয় বিষয় শিক্ষার্থীদের কাছে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর একখানা হাদীস প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, “সালাত তোমরা ঠিক তেমনিভাবে আদায় করবে যেমনটি আমাকে আদায় করতে দেখ”।
এ হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সাহাবায়ে কিরামকে সালাত আদায়ের পদ্ধতি হাতে-কলমেই শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাই শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক অবস্থায় বাস্তবভাবে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।
শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য: (Characteristics of Learners)
সুষ্ঠভাবে ইল্ম অর্জন করার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সব বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক তার মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটির কথা নিম্নে উল্লেখ করা হল:
১. শিক্ষার্থীর নিয়্যত খালিস হতে হবে। তার উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। হাদীসে আছে, প্রত্যেক কাজের ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল।
২. শিক্ষার্থীকে সর্বপ্রকার লোভ লালসা ও চারিত্রিক অধঃপতন থেকে মুক্ত থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিশ^খ্যাত ইমাম শাফিঈ (রঃ) এর বিখ্যাত উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য:
شَكَوتُ إِلى وَكيعٍ سوءَ حِفظي فَأَرشَدَني إِلى تَركِ المَعاصي
وَأَخبَرَني بِأَنَّ العِلمَ نورٌ وَنورُ اللَهِ لا يُهدى لِعاصي
আমি ওয়াকী’ (রঃ) এর কাছে আমার স্মরণশক্তির দুর্বলতার ব্যাপারে অনুযোগ করলে তিনি আমাকে পাপ পঙ্কিলতা পরিহারের উপদেশ দেন। কেননা, ইল্ম হচ্ছে আল্লাহর একটি দান আর আল্লাহর দান পাপী ব্যক্তিকে প্রদান করা হয় না।
৩. “জ্ঞানার্জনে শিক্ষার্থীর একাগ্রতা থাকা আবশ্যক। কোন এক মনীষী বলেছেন, জ্ঞান চায় তোমার পূর্ণ মনোযোগ। তুমি যদি পুরোপুরি আত্ম নিবেদিত না হও, তবে শিক্ষা তার কোন অংশও তোমাকে দিবে না”।
৪. শিক্ষকের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল থাকতে হবে, যেমনটি থাকে রুগ্ন ব্যক্তি তার চিকিৎসকের প্রতি।
৫. শিক্ষকের দৃঢ়তা ও সম্ভ্রম অন্তরে পোষণ করবে এবং আচার-আচরণে পূর্ণ শিষ্টাচার রক্ষা করবে। তাঁর আসনে কখনো বসবে না। তাঁর সম্মুখে চিৎকার করে কথা বলবে না। তাঁর সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হবে না। তবে শিক্ষা বা পাঠসংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে আদব বজায় রেখে প্রশ্ন করতে আপত্তি নেই। এমন কোন প্রশ্ন করবে না যাতে শিক্ষক লজ্জার সম্মুখীন হন।
৬. শিক্ষক ছাড়াও যে কোন বিজ্ঞ ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির এবং শিক্ষা উপকরণ এবং কিতাব পত্র প্রভৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।
৭. শিক্ষকের বক্তব্য নোট করে নিবে এবং সহপাঠীদের সাথে পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে পারস্পরিক আলোচনা করবে।
৮. সহপাঠীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে এবং সম্প্রীতিমূলক আচরণ করবে।
৯. যে ইল্ম শিক্ষা করবে সাথে সাথে তার উপর আমল করবে। কেননা আমলই হচ্ছে ইল্ম হাসিলের উদ্দেশ্য। কোন ব্যক্তি যদি কেবল অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয় করার মধ্যে জীবন কাটিয়ে দেয় অথচ সেগুলো নিজ পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সমাজের কাজে ব্যয় না করে, তবে এ উপার্জন ও সঞ্চয় মূল্যহীন হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া যে ইল্ম অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ইল্মে উন্নতিও দান করেন বলে হাদীসে বর্ণিত আছে।
১০. বাহ্যিক ইল্ম হাসিলের সাথে সাথে আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহ্র নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা ও সাধনা চালিয়ে যাবে। ইল্মকে মহাসম্পদরূপে জ্ঞান করবে এবং এ মহাসম্পদের তুলনায় পার্থিব সম্পদকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে। পার্থিব সম্পদের দিকে প্রলুদ্ধ হবে না। এ ব্যাপারে হযরত আলী (রা) এর অমর পঙ্তি স্মরণীয়:
رَضينا قِسمَةَ الجَبّارِ فينا
لَنا عِلمٌ وَلِلجُهّالِ مال
فَإِنَّ المالَ يَفنى عَن قَريبٍ
وَإِنَّ العِلمَ باقٍ لا يزال
আমরা মহা শক্তিধর প্রভুর বন্টনের প্রতি খুশি। আমাদের জন্য জ্ঞান আর মূর্খদের জন্য সম্পদ। নিশ্চয় সম্পদ অচিরেই বিনষ্ট হবে। অন্যদিকে জ্ঞান অবশিষ্ট থাকবে যা কখনো বিনষ্ট থাকবেনা।
১১. মহা মহিমান্বিত প্রভু আমাদের ব্যাপারে ভাগ বন্টনের যে ফায়সালা করেছেন তাতে আমরা তুষ্ট। তিনি আমাদের জন্যে রেখেছেন জ্ঞান আর শত্রুদেরকে দিয়েছেন সম্পদ।
১২. সর্বাবস্থায় জাহিল, দুশ্চরিত্রদের সঙ্গ পরিহার করে চলবে। কেননা, মনীষীগণ বলেন :
সাহচর্য প্রভাব বিস্তারকারী। অর্থাৎ অসৎ লোকদের সাহচর্য সংক্রামক রোগের মত মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই তাদের সংসর্গ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। হযরত আলী রাঃ বলেন: জাহিলরা (মূর্খরা) হচ্ছে ইল্মের শত্রু। الجهال للعلم اعداء
১৩. সর্বপ্রকার কূটতর্ক ও বাদানুবাদ পরিহার করে চলবে। কোননা বাদানুবাদের উদ্দেশ্য প্রায় ক্ষেত্রেই থাকে অন্যকে জব্দ করে নিজের প্রাধান্য বিস্তার করা। এটা কোন প্রশংসনীয় ব্যাপার নয়। ইমাম গায্যালী (রঃ) এটাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
১৪. শিক্ষার্থীকে আত্মমর্যাদাশীল হতে হবে এবং গাম্ভীর্য রক্ষা করে চলতে হবে। যাতে অন্যের মুখাপেক্ষী না হতে হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় কোন অর্থকরী বিদ্যাও শিখে নেওয়া উচিত। প্রাথমিক যুগে আলিমগণ ইল্মে তিব্ব’ (চিকিৎসা বিদ্যা) বা অন্য কোন অর্থকড়ী বিদ্যাও শিখে নিতেন।
এ প্রসঙ্গে স্মতর্ব্য, মুসলিম বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ লোকের ধর্মীয় ইমাম, ইমামে আযম বলে বিশ^খ্যাত হযরত আবূ হানীফা (রঃ) বস্ত্র ব্যবসায়ী তথা বয়ন শিল্পী ছিলেন। বিখ্যাত মোঘল সম্রাট আলমগীর জিন্দাপীর নামে খ্যাত। সম্রাট আওরঙ্গজেব কুরআনের লিপিকর্মের দ্বারা তাঁর সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করতেন। তাঁরও পূর্বে দিল্লী সম্রাট নাসির উদ্দীন টুপী সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁরা রাজকোষ থেকে কোন বেতন ভাতা নিতেন না।
১৫. প্রত্যেকের রুচি ও মেধা একরকম হয় না বিধায় শিক্ষার্থীকে তার রুচি মাফিক বিষয় নির্বাচন করে নিতে হবে। এজন্যে শিক্ষকগণের বা অন্যান্য বিজ্ঞজনের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১৬. শিক্ষার্থীকে অবশ্যই সময়নিষ্ঠ এবং সুশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী হতে হবে। তাকে সময়মত পানাহার, নামায আদায় ও বিশ্রাম নিতে হবে এবং সময়মত পড়ার টেবিলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির থাকতে হবে। নির্ঘন্ট ঠিক করে তা মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে জীবনে শৃঙ্খলাবোধ ও সময়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৭. শিক্ষা সফর বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে মাঝে মধ্যে ভ্রমণ বাঞ্ছনীয়। এতে ইতিহাস, ভূগোল এবং প্রাচীন নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করা যায়।
১৮. প্রত্যেক শিক্ষার্থী শিক্ষার ব্যাপারে অন্যদেরকে উৎসাহিত করবে এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক :
(Relationship between Teachers and Students According to Islam)
ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। মর্যাদার দিক দিয়ে শিক্ষকও পিতামাতার তুল্য। চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাঃ) বলেন, “যার কাছে আমি একটি শব্দও শিখেছি আমি তার গোলাম। তিনি ইচ্ছা করলে আমাকে বিক্রি করে দিতে পারেন। ইচ্ছা করলে আযাদ করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে গোলাম বানিয়েও রাখতে পারেন”।
ইমাম আযম আবূ হানীফা (রঃ) জীবনে কোন দিন তাঁর উস্তাদের বাড়ির দিকে পা ছড়িয়ে দিয়ে বসেননি এবং তাঁর উস্তাদ হাম্মাদ (রাঃ) যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত কেবল এ আশঙ্কায় নিজে মাদ্রাসা খুলে শিক্ষাদানে ব্রতী হননি যে, পাছে তার উস্তাদের শাগরিদগণ উস্তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানে এসে ভর্তি হয়ে পড়ে আর বাহ্যত তিনি উস্তাদের প্রতিন্দ্বী হয়ে যান। সম্রাট আলমগীরের পুত্র ও তাঁর শিক্ষাগুরুর ঘটনা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। একদিন তিনি যখন দূর থেকে লক্ষ্য করলেন যে, তাঁর এক পুত্র উস্তাদের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে আর তিনি নিজে হাত দিয়ে পা পরিষ্কার করছেন। তখন শাহী দরবারে উস্তাদকে তলব করে এই বলে ভৎসনা করেন যে, আমার পুত্রকে আপনি কি আদব কায়দা শিক্ষা দিলেন? তাঁরা কেন নিজ হাতে আপনার পা ধুয়ে দিল না?
সুতরাং শিক্ষক ছাত্রদের জন্য পিতৃতুল্য সম্মানের পাত্র। শিক্ষককেও তাঁর ছাত্রদের প্রতি অত্যন্ত যত্মশীল হতে হবে এবং পিতৃস্নেহ দিয়ে আপন সন্তানের মত তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
বস্তুত শিক্ষা প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য স্রষ্টা এবং তাঁর সৃষ্টির সকল অনুষঙ্গকে উপলদ্ধি করে একজন ব্যক্তির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনকে অর্থবহ করে তোলা, সুন্দর ও কল্যাণকর করে তোলা। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকম-লীর সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। প্রয়োজন নিজেকে আলোকিত করে সে আলোয় নিজের ভূবনকে বিকশিত করা।
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আবু ইউছুফ খান
অধ্যক্ষ
তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা
মন্তব্য (৯০)
tsantsa
says ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ at ৭:২২ পূর্বাহ্নxyandanxvurulmus.HWIOfuITdhhS
virilescent
says ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ at ৭:২৪ পূর্বাহ্নxyandanxvurulmus.lDJ0jKsxMu5w
helilifted
says ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্নhelilifted xyandanxvurulmus.M7skZIloW3xf
gold ira companies
says ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩ at ৪:১৪ পূর্বাহ্নI think that is one of the such a lot significant info for me.
And i am glad studying your article. However wanna statement on some common things, The web site
style is wonderful, the articles is in reality nice : D.
Good process, cheers
linetogel slot
says জানুয়ারী ০৩, ২০২৪ at ৬:১৬ পূর্বাহ্নKeren sekali blog ini! ???? Saya sangat menyukai bagaimana penulisannya memberikan pemahaman yang baik dalam topik yang dibahas. ???? Artikelnya menghibur dan mendidik sekaligus. ???? Tiap artikel membuat saya semakin penasaran untuk menjelajahi konten lainnya. Teruskan kerja yang bagus
döl sohbet
says ফেব্রুয়ারী ০৪, ২০২৪ at ১:১৪ অপরাহ্নsohbet.net sohbet sikesinde sikis filmleri izleyebilirsiniz porno film cevirebilirsiniz
Grandpasha Bet Bahis
says ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৪ at ৯:২৬ অপরাহ্নgrandpashabet, grandpashabet giriş, grandpashabet bonus
scam
says মার্চ ০৩, ২০২৪ at ৭:১৮ অপরাহ্নwow, amazing
lose money
says মার্চ ০৪, ২০২৪ at ১২:৩৮ পূর্বাহ্নSuperb, congratulations
scam
says মার্চ ০৫, ২০২৪ at ৫:১৪ অপরাহ্নPhenomenal, great job
scam
says মার্চ ০৬, ২০২৪ at ৮:৪৬ অপরাহ্নMagnificent, wonderful.
lose money
says মার্চ ০৬, ২০২৪ at ৯:২২ অপরাহ্নExceptional, impressive work
scam
says মার্চ ০৭, ২০২৪ at ৮:৫৪ পূর্বাহ্নwow, amazing
kahveoyun
says মার্চ ০৭, ২০২৪ at ১০:০৬ পূর্বাহ্নKahveOyun.com – Mobil ve bilgisayar üzerinden okey odalarında oynayarak zaman geçireceğiniz ve okey oynarken sohbet edebilme fırsatını ücretsiz sunmaktadır.
phising
says মার্চ ০৮, ২০২৪ at ২:২৬ অপরাহ্নwow, amazing
fuck google algorithm
says মার্চ ১১, ২০২৪ at ৪:৪৬ অপরাহ্নwow, amazing
google stole mydata
says মার্চ ১২, ২০২৪ at ৯:৪৩ পূর্বাহ্নwow, amazing
lose money
says মার্চ ১২, ২০২৪ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
fucking google updates
says মার্চ ১২, ২০২৪ at ১:৫০ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
scam
says মার্চ ১২, ২০২৪ at ৪:০৪ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
google stole mydata
says মার্চ ১৩, ২০২৪ at ২:২৫ অপরাহ্নwow, amazing
Kahve Oyun
says মার্চ ১৩, ২০২৪ at ৫:৩৩ অপরাহ্নKahve amina Okey ayagimi Kahvesokucamokey
phising
says মার্চ ১৬, ২০২৪ at ২:৪২ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
SCAM
says মার্চ ১৭, ২০২৪ at ৬:৫১ পূর্বাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
LOSE MONEY
says মার্চ ১৮, ২০২৪ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্নwow, amazing
PHISING
says মার্চ ১৮, ২০২৪ at ৯:৪৭ পূর্বাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
PHISING
says মার্চ ১৮, ২০২৪ at ১০:৫০ পূর্বাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
PHISING
says মার্চ ১৯, ২০২৪ at ২:৪৮ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
LOSE MONEY
says মার্চ ১৯, ২০২৪ at ৭:৪৭ অপরাহ্নwow, amazing
SCAM
says মার্চ ২০, ২০২৪ at ১০:১২ পূর্বাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
where do magic mushrooms grow naturally
says মার্চ ২১, ২০২৪ at ৬:০৭ পূর্বাহ্নI’m curious to find out what blog platform you are working with?
I’m experiencing some minor security problems with my latest site
and I would like to find something more safeguarded. Do you have any
recommendations?
amanita mushrooms
says মার্চ ২১, ২০২৪ at ৬:৩০ পূর্বাহ্নExcellent site you have here.. It’s hard to find good quality writing like yours nowadays.
I honestly appreciate individuals like you! Take care!!
PHISING
says মার্চ ২১, ২০২৪ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্নwow, amazing
LOSE MONEY
says মার্চ ২১, ২০২৪ at ১২:১৭ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
LOSE MONEY
says মার্চ ২২, ২০২৪ at ৭:১৯ পূর্বাহ্নwow, amazing
SCAM
says মার্চ ২৩, ২০২৪ at ৮:২৪ অপরাহ্নMagnificent, wonderful.
LOSE MONEY
says মার্চ ২৩, ২০২৪ at ৮:২৮ অপরাহ্নRemarkable, excellent
PHISING
says মার্চ ২৩, ২০২৪ at ৮:৫১ অপরাহ্নFabulous, well executed
SCAM
says মার্চ ২৩, ২০২৪ at ৮:৫৫ অপরাহ্নImpressive, congrats
PHISING
says মার্চ ২৫, ২০২৪ at ১১:৪৬ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
lose money
says মার্চ ২৭, ২০২৪ at ১১:৫২ পূর্বাহ্নwow, amazing
lose money
says মার্চ ২৮, ২০২৪ at ১২:৩৫ অপরাহ্নwow, amazing
phising
says মার্চ ২৯, ২০২৪ at ২:৩০ অপরাহ্নwow, amazing
phsing
says মার্চ ২৯, ২০২৪ at ৬:২২ অপরাহ্নhello
phsing
says মার্চ ২৯, ২০২৪ at ৬:৪৫ অপরাহ্নhello
deneme porno bonusu
says মার্চ ৩০, ২০২৪ at ৬:০৮ অপরাহ্নo bizden caldigin tasarimlari ananin amina sokucaz az kaldi bekle
scam
says মার্চ ৩১, ২০২৪ at ১০:২৫ পূর্বাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
phising
says মার্চ ৩১, ২০২৪ at ৫:৩৩ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
phising
says এপ্রিল ০১, ২০২৪ at ১১:০৫ অপরাহ্নnice content!nice history!! boba 😀
criminal
says এপ্রিল ০৩, ২০২৪ at ৩:০৫ অপরাহ্নscam
criminal
says এপ্রিল ০৩, ২০২৪ at ৭:৩৭ অপরাহ্নscam
scam
says এপ্রিল ০৩, ২০২৪ at ৭:৪৫ অপরাহ্নphising
lose money
says এপ্রিল ০৩, ২০২৪ at ৭:৫৪ অপরাহ্নphising
lose money
says এপ্রিল ০৪, ২০২৪ at ১১:৪১ পূর্বাহ্নscam
lose money
says এপ্রিল ০৪, ২০২৪ at ৩:৫২ অপরাহ্নscam
scam
says এপ্রিল ০৪, ২০২৪ at ৩:৫৪ অপরাহ্নphising
scam
says এপ্রিল ০৪, ২০২৪ at ৩:৫৬ অপরাহ্নphising
scam
says এপ্রিল ০৫, ২০২৪ at ১২:০৭ অপরাহ্নphising
lose money
says এপ্রিল ০৫, ২০২৪ at ১২:০৭ অপরাহ্নscam
criminal
says এপ্রিল ০৫, ২০২৪ at ১২:০৭ অপরাহ্নlost money
lose money
says এপ্রিল ০৫, ২০২৪ at ১২:১১ অপরাহ্নscam
scam
says এপ্রিল ০৭, ২০২৪ at ৭:১৪ পূর্বাহ্নphising
lose money
says এপ্রিল ০৭, ২০২৪ at ১১:৩৮ পূর্বাহ্নscam
lose money
says এপ্রিল ০৭, ২০২৪ at ১১:৪১ পূর্বাহ্নlost money
criminal
says এপ্রিল ০৭, ২০২৪ at ১১:৪৬ পূর্বাহ্নscam
lose money
says এপ্রিল ০৮, ২০২৪ at ১:২৬ অপরাহ্নscam
lose money
says এপ্রিল ০৮, ২০২৪ at ৪:৫৯ অপরাহ্নphising
lose money
says এপ্রিল ০৮, ২০২৪ at ৫:০১ অপরাহ্নphising
lose money
says এপ্রিল ১০, ২০২৪ at ৩:২৩ অপরাহ্নI highly advise stay away from this site. My personal experience with it has been purely frustration as well as concerns regarding deceptive behavior. Exercise extreme caution, or even better, seek out an honest service to meet your needs.
lose money
says এপ্রিল ১১, ২০২৪ at ৭:১০ পূর্বাহ্নI strongly recommend to avoid this platform. My own encounter with it was nothing but dismay as well as doubts about fraudulent activities. Exercise extreme caution, or even better, look for an honest service to fulfill your requirements.
lose money
says এপ্রিল ১১, ২০২৪ at ২:৩৬ অপরাহ্নI strongly recommend stay away from this site. The experience I had with it has been purely dismay as well as concerns regarding deceptive behavior. Be extremely cautious, or alternatively, look for a trustworthy service to fulfill your requirements.
lose money
says এপ্রিল ১১, ২০২৪ at ২:৩৯ অপরাহ্নI urge you to avoid this platform. My personal experience with it has been purely dismay along with concerns regarding scamming practices. Be extremely cautious, or better yet, find an honest service to fulfill your requirements.
criminal
says এপ্রিল ১১, ২০২৪ at ২:৪২ অপরাহ্নI urge you to avoid this platform. The experience I had with it has been only disappointment along with concerns regarding fraudulent activities. Proceed with extreme caution, or even better, seek out a trustworthy site to meet your needs.
lose money
says এপ্রিল ১৩, ২০২৪ at ৭:১৪ পূর্বাহ্নI strongly recommend steer clear of this platform. My personal experience with it was only dismay along with doubts about scamming practices. Exercise extreme caution, or better yet, seek out a more reputable site to fulfill your requirements.
scam
says এপ্রিল ১৩, ২০২৪ at ৪:২৫ অপরাহ্নI strongly recommend steer clear of this platform. My personal experience with it has been only dismay along with suspicion of deceptive behavior. Exercise extreme caution, or even better, find a more reputable platform to meet your needs.
criminal
says এপ্রিল ১৩, ২০২৪ at ৪:২৭ অপরাহ্নI strongly recommend steer clear of this site. My personal experience with it was only dismay and doubts about fraudulent activities. Be extremely cautious, or alternatively, seek out a more reputable platform to meet your needs.
criminal
says এপ্রিল ১৪, ২০২৪ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্নI highly advise to avoid this platform. My own encounter with it was only dismay and doubts about fraudulent activities. Be extremely cautious, or alternatively, look for a trustworthy site to fulfill your requirements.
lose money
says এপ্রিল ১৪, ২০২৪ at ৯:৪৬ পূর্বাহ্নI strongly recommend to avoid this platform. The experience I had with it was nothing but frustration as well as doubts about scamming practices. Exercise extreme caution, or even better, seek out an honest service to fulfill your requirements.
criminal
says এপ্রিল ১৪, ২০২৪ at ১১:৫৮ পূর্বাহ্নI urge you steer clear of this platform. My own encounter with it was nothing but disappointment and suspicion of deceptive behavior. Be extremely cautious, or better yet, look for a more reputable service to fulfill your requirements.
scam
says এপ্রিল ১৫, ২০২৪ at ৭:১৫ পূর্বাহ্নI highly advise steer clear of this platform. My personal experience with it was nothing but disappointment and concerns regarding scamming practices. Proceed with extreme caution, or even better, find an honest service to meet your needs.
criminal
says এপ্রিল ১৫, ২০২৪ at ৯:৫৭ পূর্বাহ্নI highly advise stay away from this platform. The experience I had with it was only disappointment as well as suspicion of fraudulent activities. Proceed with extreme caution, or alternatively, seek out a more reputable site for your needs.
lose money
says এপ্রিল ১৫, ২০২৪ at ১১:৫৫ পূর্বাহ্নI strongly recommend to avoid this site. My personal experience with it has been only dismay and doubts about fraudulent activities. Exercise extreme caution, or even better, seek out a more reputable platform to meet your needs.
lose money
says এপ্রিল ১৬, ২০২৪ at ১০:২৭ পূর্বাহ্নI urge you to avoid this site. My own encounter with it has been nothing but disappointment and suspicion of fraudulent activities. Proceed with extreme caution, or alternatively, look for an honest service for your needs.
Free mynet okey Porn Videos
says এপ্রিল ১৬, ২০২৪ at ৯:৫৭ অপরাহ্নwebsitem için çok işime yaradı teşekkür ederim
Utwórz konto osobiste
says এপ্রিল ২১, ২০২৪ at ৮:৫০ পূর্বাহ্নYour article helped me a lot, is there any more related content? Thanks!
lose money
says এপ্রিল ২৮, ২০২৪ at ১২:৩৫ পূর্বাহ্নI urge you to avoid this site. My personal experience with it has been only disappointment along with doubts about deceptive behavior. Proceed with extreme caution, or even better, find a more reputable platform to meet your needs.I strongly recommend to avoid this platform. My personal experience with it has been nothing but dismay as well as concerns regarding deceptive behavior. Proceed with extreme caution, or even better, find a more reputable site to fulfill your requirements.
lose money
says মে ০৭, ২০২৪ at ১২:৪৬ পূর্বাহ্নI strongly recommend stay away from this site. My own encounter with it has been purely disappointment along with concerns regarding fraudulent activities. Exercise extreme caution, or alternatively, look for an honest platform to meet your needs.
lose money
says মে ০৮, ২০২৪ at ১০:৫৫ অপরাহ্নI urge you to avoid this site. The experience I had with it was only disappointment as well as suspicion of scamming practices. Be extremely cautious, or better yet, look for an honest service to fulfill your requirements.
lose money
says মে ১০, ২০২৪ at ৪:৩১ পূর্বাহ্নI highly advise stay away from this site. The experience I had with it was only dismay and suspicion of fraudulent activities. Proceed with extreme caution, or even better, look for a more reputable platform to meet your needs.
lose money
says মে ১২, ২০২৪ at ১২:২৪ পূর্বাহ্নI urge you steer clear of this platform. My personal experience with it has been only frustration as well as doubts about scamming practices. Proceed with extreme caution, or even better, look for a trustworthy site to fulfill your requirements.