ড. মুহাম্মাদ আবু ইউছুুফ খান
অধ্যক্ষ, তা’মীরুরল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা
ন্যায়বিচার মানবজীবনের সর্বস্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ন্যায়বিচার ছাড়া জীবনের কোনো অবস্থাতেই শান্তি-শৃঙ্খলা, জানমাল ও মান-সম্মানের নিরাপত্তা রক্ষিত হতে পারে না। তাই সমাজকে শান্তিপূর্ণ ও আবাসযোগ্য করার নিমিত্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন প্রয়োগ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই একটি সমাজকে শান্তিপূর্ণ ও সুখী সমৃদ্ধিশালী সমাজে পরিণত করা সম্ভব।
ন্যায়বিচার কী: ন্যায়বিচার শব্দটির আরবি প্রতশব্দ আদল। যার বাংলা অর্থ-সোজা করা, ভারসাম্য রক্ষা করা ইত্যাদি। ইংরেজিতে এর অর্থ করা হয়েছে- Right, Judgement, Similarity, Resemblance, Fainr appearance, Justice, ইত্যাদি। এর থেকে প্রতীয়মান হয়, মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে শরীয়াতের মানদণ্ডে বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক সমতা রক্ষা করা বা কম-বেশি না করাকে আদল বা ন্যায়বিচার বলে। ন্যায়বিচার বা আদলের ক্ষেত্র ব্যাপক। মানুষের সামগ্রিক জীবনে আদলের ব্যাপারটি পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে।
ন্যায়বিচার বা আদলের গুরুত্ব : আদল বা ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি অন্যতম সিফাত বা গুণের নাম হচ্ছে আদল বা ন্যায়বিচারক। গোটা সৃষ্টি জগতকে তিনি আদল বা ন্যায়বিচারে সাথে পরিচালনা করেন। তাঁর আদেশ-নিষেধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও বিন্দুমাত্র অন্যায় বা অবিচার নেই সব্যত্র পরিপূর্ণ আইনের বিধান ও নিয়মশৃঙ্খলা নির্দেশ বলবৎ রয়েছে।
আইন কী : আইনের প্রতিশব্দ হলো- Law, Regulation, Statute, Rule ইত্যাদি। আইন শব্দটি দুটো ধারণার সমন্বয়। যথা- ১. আদেশ, ২. শক্তি।
Austin- এর মতে, ‘Law is the command of the soverign’ তথা আইন হলো সার্বভৌম সত্তার আদেশ।
According to Salmond এর মতে, ‘Law is the body of principles recogninzed and applied by the state in the administration of justice’, তথা, আইন হলো নীতির সমষ্টি যা রাষ্ট্র কর্তৃক বিচার ব্যবস্থা স্বীকৃত এবং প্রয়োগ করা হয়।
তাই ইসলামী আইন হলো সার্বভৌম সত্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশ, যা প্রয়োগে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র তথা সর্বক্ষেত্রে সবার চাহিদা ও সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত হোক বা না হোক।
মূলত আইন এমন একটি অপরিহার্য বিষয়, যার দ্বারা মানবসমাজকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমেই সমাজের ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং জুলুম-অত্যাচারের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয় ও সবার অধিকার সংরক্ষিত হয়। মানুষকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা তথা কল্যাণ লাভ ও ক্ষতির হাত থেকে রেহাই দেয়া আইনের মূল উদ্দেশ্য। আইন সমাজের, মানুষের মুক্তি, সাফল্য ও কল্যাণের হাতিয়ার বিশেষ। নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করাই আইনের কাজ।
ইসলামী আইনের উৎস : ন্যায় ও সৎবৃত্তির প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও অসৎবৃত্তির মূলোৎপাটনে ইসলামী আইনে বাস্তবনির্ভর দিকনির্দেশনা রয়েছে। মানব রচিত আইনের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণ কামনা করা নিতান্তই হাস্যকর। সৃষ্টিকুলের সামগ্রীক কার্যক্রম, গতি-প্রকৃতি, অত্যন্ত সুচারূপে ও কার্যকরণে ইসলামী আইনের কোনো বিকল্প নেই। আর ইসলামী আইনের মাধ্যমেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইসলামী আইনের উৎস চারটি। যথা- (ক) আল কুরআন তথা ঐশী বাণী। (খ) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সুন্নত তথা আল-হাদিস। (গ) ইজমা ও (ঘ) কিয়াস।
আইনের উৎস সম্পর্কে Certen Coolidye বলেন, Assigning to the law a divine souree and authority and identity it with right reason is but a confession of inability to define or explain it. It is but saying that law is so far that product of our highest reason that no human origin can be assigned to it and therefore that its source and authority must be devine.
ন্যায়বিচার ও ইসলামী আইন: ন্যায়বিচার ও ইসলামী আইন দু’টি বিষয় বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভিন্ন মনে হলেও মৌলিকভাবে এটি এক অভিন্ন এবং একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলামী আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত বিষয় হচ্ছে ন্যায়বিচার। ন্যায়বিচার ছাড়া যেমন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সম্ভব নয় তেমনি ইসলামী আইন ছাড়া যেমন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সম্ভব নয় তেমনি ইসলামী আইন ছাড়া ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ। তাই সমাজ, রাষ্ট্র সর্বস্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং অগ্রগতি খুঁজে পেতে হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আইন অনিবার্য।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা : ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হলো ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্র কায়েম না থাকা। তথা সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামের বিধি-বিধানের অনুপস্থিতি, ইসলাম বা ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ, নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা সমাজ পরিচারিত না হওয়া। ন্যায়বিচার না থাকার কারণে সত্যিকারের শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা, মানুষের মনে আল্লাহভীতি বা দীনি অনুভূতির অভাব, তা ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও কায়েমী শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়অর মোহ আচ্ছন্নে ডুবে থাকা সত্তেও দীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের বিধান জারির বিষয়ে গণসচেতনার অনুপস্থিতিই অন্য অন্যতম।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী :
الذين أن مكنهم فى الارض أقاموا الصلوة وأتوا الزكوة وأمروا بالمعروف ونهوا عن المنكر ط ولله عاقبة الأمور-
‘এরা এমন সব লোক, যাদের আমি যদি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করি, তাহলে এরা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজ করতে নিষেধ করবে। আর সব বিষয়ের পরিণাম আল্লাহর হাতে।’ -সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত-৪১
ولتكن منكم أمة يدعون إلى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن المكر ط وأولئك هم المفلحون-
‘তোমাদের মধ্যে এমন কিুছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মের দিকে আহ্বান জানাবে, ভালো কাজে নির্দেশ দিবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে।’ -সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১০৪
يأيها الذين امنوا كونوا قومين بالقسط شهداء لله ولو على أنفسكم أو الوالدين والأقربين ج أن يكن غنيا أو فقيرا فالله أولى بهما قف فلاتتبعوا الهوى إن تعدلو وأن تلوا أو تعرضوا فإن الله كان بما تعملون خبيرا-
‘হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহ সাক্ষী হয়ে যাও, তোমাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও। উভয়পক্ষ ধনী বা অভাবী যাই হোক না কেন, আল্লাহ তাদের চেয়ে অনেক বেশি কল্যাণকামী। কাজেই নিজেদের কামনার বশবর্তী হয়ে ইনসাফ থেকে বিরত থেকে না। আর যদি তোমরা পেঁচানো কথা বল অথবা সত্যতাকে পাশ কাটিয়ে চলো, তাহলে জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ তার খবর রাখেন।’ -সূরা আন-নিসা, আয়াত-১৩৫।
يايها الذين امنوا كونوا قومين لله شهداء بالقسط ولا يجرمنكم شنأن قوم على ألا تعدلوا اعدلوا هو أقرب للتقوى واتقوا الله إن الله خبير بما تعملون-
‘হে ঈমানদারগণ! সত্যের ওপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত ও ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হয়ে যাও। কোনো দলের শত্রুতা তোমাদের যেন এমন উত্তেজিত না করে দেয়, যার ফলে তোমরা ইনসাফ থেকে সরে যাও। ইনসাফ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠিত করো এবং আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্পর্কে জ্ঞাত’। -সূরা আল-মায়েদা, আয়াত-০৮
রাসূলের কারীম (সা.) এর বাণী: রাসূলে কারীম (সা.) এর গোটা জীবন ছিল আদল ও ইনসাফের প্রতিচ্ছবি। আদল ও ইনসাফের বাইরে কখনো তিনি কোনো কাজ করেননি, করতে নির্দেশও দেননি। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রেই তিনি আদল বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আদল বা ন্যায়-নীতির গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলে কারীম (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমার ওপর তোমার চোখের অধিকার আছে, আছে দেহের অধিকার, এমনকি তোমার স্ত্রীরও অধিকার।’
রাসূলে কারীম (সা.) আরো বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে কলহে লিপ্ত হত্যাকারী এবং নিহত উভয়ই জাহান্নামী।’-বুখারী
এমনিভাবে রাসূলে কারীম (সা.) অসংখ্য হাদিসের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
ইসলামী আইনের প্রয়োগিক সাফল্য : ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলামী আইনের প্রয়োগিক সাফল্য অপরিসীম ও বর্ণনাতীত। এতে মানুষের সামগ্রিক জীবনেই রয়েছে সুদূর প্রসারী সফলতা। যেমন-
ক. ব্যক্তিগত জীবন : মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে আদলের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। ব্যক্তিগত জীবনে যদি কোনো ব্যক্তি তার যাবতীয় কাজ-কর্মে ভারসাম্য রক্ষা না করে তবে তার জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে! পক্ষান্তরে ভারসাম্য রক্ষা করে চললে তার জীবন হয় উন্নত, সাফল্যমণ্ডিত এবং সে হয় সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তাই তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-
إن الله يامركم أن تؤدوا الامنت إلى أهلها وإذا حكمتم بين الناس أن تحكموا بالعدل-
‘হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারদের হাতে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর লোকদের মধ্যে ফয়সালা করার সময় আদল ও ন্যায়নীতি সহকারে ফয়সালা করো।’-সূরা আল-নিসা, আয়াত-৫৮
খ. পারিবারিক জীবন : পারিবারিক জীবনে আদলের ভূমিকাও অনেক বেশি। মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পুরুষ এবং নারীরূপে এবং উভয়কে মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করে আদল বা ন্যায়বিচারে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। তাই পারিবারিক জীবনে স্বামী এবং স্ত্রী আল্লাহর বিধান তথা আদলের ভিত্তিতে চললে তাদের জীবন হয় সুখী ও সমৃদ্ধময়। পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে-
ولهن مثل الذى عليهن بالمعروف وللرجال عليهن درجة-
‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়মানুয়ী অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর।-সূরা বাকারা, আয়াত-২২৮
অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে স্ত্রীদের পক্ষ থেকে স্বামীর অধিকার, স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর অধিকার সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যা পালন করলে মানুষের পারিবারিক জীবন হয়ে উঠবে সফল ও শান্তিময় লেশমাত্র সেখানে থাকবে না।
গ. সামাজিক জীবন : সামাজিক জবিনে মানুষের সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে ইসলামী আইন শাস্ত্রে অন্যায়-অনাচার প্রতিরোধে যে বিধি-বিধান রয়েছে সত্যিকারভাবে এই বিধান প্রয়োগ হলে সমাজে কোনো অশান্তি ও অরাজকতা থাকতেই পারে না।
ইসলামী বিধানে সামাজিক জীবনে মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, ফ্যাসাদ ইত্যাদি অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার যত পন্থা আছে সবকিছুর ব্যাপারে স্পষ্ট হয়েছে, যা প্রয়োগ করতে পারলে যে কোনো সমাজ একটি সফল ও আদর্শ সমাজে পরিগণিত হতে বাধ্য।
ঘ. রাষ্ট্রীয় জীবন : ‘Islam is the complete code of life’ হিসেবে জীবন সমস্যার সব বিষয়ে সমাধান দেবে ইসলাম এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম এমন বিধান প্রণয়ন করেছে যা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র সুখী-সমৃদ্ধিশালী ও শৃঙ্খলাময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে পৃথিবীতে ইসলাম ছাড়া বিকল্প কোনো ধর্ম বা মতবাদ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা, উন্নতি, অগ্রগতি, সংহতি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্খা গ্রহণ করেছে। যেমন- উশর, খারাজ, বায়তুলমাল গঠনসহ নানা ধরণের সুন্দর দৃষ্টান্ত ইসলামী রাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থাকে করেছে অত্যন্ত সুসংহত।
ঙ. বিশ্বব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে : ইসলাম শুধু ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ব্যাপারে সমাধান দেয়নি বরং বিশ্ব ব্যবস্থার ব্যাপারেও ইসলামের রয়েছে সুমহান নির্দেশনা ও সমাধান। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো দুর্বল রাষ্ট্রের ওপর জুলুম করবে, প্রভুত্ব কায়েম করবে, অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে দেবে, আক্রমণ করবে, ইসলাম তা আদৌ সমর্থন করতে পারে না এবং পছন্দও করে না; বরং হাদিস শরিফে এসেছে- ‘গোটা বিশ্বে মুসলিম জাতি একটি দেহের মতো, তাই দেহের কোথাও আক্রান্ত হলে যেমনি গোটা দেহ আক্রান্ত হয় তেমনি পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কোনো মুসলমান আক্রান্ত হলে পৃথিবীর সব জায়গায় সব মুসলমান তাতে আক্রান্ত হবে, দুঃখিত হবে, ব্যথিত হবে এবং জালিমের জুলুম প্রতিহত করবে, মজলুমকে সাহায্য করবে।
পরিশিষ্ট : পরিশেষে একথা সুস্পষ্ট ভাষায় বলা যায় যে, কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রে উন্নতি, অগ্রগতি, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী আইনের প্রয়োগের বিকল্প নেই। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত এমন একটি রাষ্ট্রের উদাহরণ মিলবে না যেখানে ব্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বা ইসলামের বিধি-বিধান প্রয়োগ ছাড়া শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য উদারতা, উন্নতি ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা প্রায়োগিক সফলতার জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশের দিকেই আমাদের ফিরে আসতে হবে।