ভূমিকা:
মানুষ আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি তথা আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তা’আলা বলেন ‘আমি আদম সন্তানকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা প্রদান করেছি’ (সুরা আল ইসরা-৭০)। আদম সন্তান বলতে নর-নারী উভয়কেই বোঝায়। তন্মধ্যে নারী জাতি আল্লাহ তা’আলার অশেষ অনুগ্রহ বিশেষ। আল্লাহ তা’আলা নারীকে পুরুষের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে জীবনতরী পরিচালনার জন্য পারস্পরিক অধিকারভুক্ত করেছেন। ইসলাম নারীকে যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করে তাকে সম্মানের সুউচ্চ আসনে সমাসীন করেছে।
নারীর অধিকার
অধিকার অর্থ হলো-প্রাপ্য বা পাওনা। কারো পাওনা বা প্রাপ্য প্রদানের অর্থ হচ্ছে,তার যা পাওনা তাকে তা যথাযথভাবে প্রদান করা। প্রাপ্য বা পাওনা বলতে তার অধিকার স্বীকার করা,তার অবদানসমূহকে যথার্থ মূল্যায়নকে বুঝায়। সুতরাং যদি কারো ন্যায্য অধিকার স্বীকার করে, দায়িত্বের যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পূর্বক তার সামর্থ্য অনুসারে তাকে দায়িত্ব-কর্তব্য আদায় করার পূর্ণ সুযোগ দান করা হয় এবং সামাজিক জীবনে তার অবদানসমূহের মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে তার প্রতি উপযুক্ত মর্যাদা প্রদর্শন করা হয়েছে বলে মনে করতে হবে। নারীর অধিকার বা মর্যাদা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, তার ন্যায্য প্রাপ্য যথাযথ প্রদান করা, তার অবদানসমূহের যথাযথ মূল্যায়ন করা ।
নারী সৃষ্টির রহস্য
আল্লাহতা’আলা মানবজাতি একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছন। তিনি কুরআন মাজীদে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন-‘ হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী আদি পিতা আদম (আ.) ও আদি মাতা হাওয়া (আ.) হতে সৃষ্টি করেছি’। (সূরা আল হুজুরাত:১৩)
মানব সৃষ্টির শুরু হতে মানব সৃষ্টিতে যেভাবে পুরুষ সমান অংশীদার অনুরূপ মহিলা ও সমান অংশীদার। কাজেই মানবজাতির শুরু হতেই ভবিষ্যৎ বংশবৃদ্ধি নারী-পুরুষ উভয়ের উপর সমানভাবে নির্ভরশীল। নারী-পুরুষের মিলন ব্যতীত মানব-সৃষ্টির চিন্তাও করা যায় না। মানব সৃষ্টিতে পুরুষের প্রয়োজন অপরিহার্য, নারীর প্রয়োজনও অনস্বীকার্য। এ প্রেক্ষিতে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান মর্যাদার অধিকারী। অন্যদিকে আল্লাহ তা’আলার মানব সৃষ্টির এ চিরাচরিত ও সাধারণ নিয়মের বিপরীত ও কয়েকটি বিশেষ পরিস্থিতে তাঁর কুদরতের নিদর্শন প্রকাশার্থে অলৌকিক সৃষ্টি পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। আদি পিতা আদম (আ.)- কে নর-নারীর মিলন ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মাটির মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। নারী-পুরুষের মিলনেই মানবজাতির বংশবৃদ্ধি চলে আসছে এবং এ পদ্ধতিই শেষ পর্যন্ত চলতে থাকবে। মানব সৃষ্টির শুরুর দিকে আল্লাহ তা’আলা আদি পিতা আদম (আ.) কে সৃজন করার পর তাঁর বাম পাঁজরের একটি হাড় হতে তাঁর সহধর্মিণী. আদি মাতা হাওয়া (আ.) কে সৃজন করেন। অতঃপর তাদের থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ সৃজন করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘হে মানব তোমরা তোমদের সেই প্রতিপালকে ভয় করো যিনি তোমদেরকে একটি প্রাণ (আদম) হতে সৃষ্টি করেন, আর তা হতে তাঁর স্ত্রীকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর উভয় হতে নর -নারী বিশ্ব জগতে বিস্তৃত করেন।
(সূরা আন-নিসা:১)
উল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে এবং ভবিষ্যৎ মানবজাতির বংশের ধারাবাহিকতা ও সংরক্ষণ করার তাকিদে করুণাময় দয়ালু আল্লাহতা’আলা নর-নারীকে সৃষ্টি করেছেন। আবার তিনিই অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মানবজতির বংশ বৃদ্ধির একই পদ্ধতি তথা নারী-পুরুষের মিলনের ফলে ভবিষ্যৎ বংশ সংরক্ষণের সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নারী জাতিকে যথাক্রমে গর্ভধারণ, সন্তান প্রজনন, স্তন্যদান ও সন্তান ভূমিষ্ঠের পর তার লালন-পালন করে ক্রমান্বয়ে বড় হওয়া পর্যন্ত সন্তান সেবার গুরুদায়িত্ব সমর্পন করেছেন। আর পুরুষ জাতিকে নারীর প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে ভবিষ্যতে মানবজাতির দ্বারা পৃথিবীর বৈচিত্রময় সুন্দর বাগানকে সুশোভিত করেছেন।
মানবজাতির নারী-পুরুষ একে অপরের সম্পূরক এবং উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক এক অপরিহার্য সম্পর্ক। কেননা, এক প্রকারকে বাদ দিয়ে অপরটির চিন্তা করা সম্ভব নয়। সুতরাং পুরুষ ব্যতীত নারীর অস্তিত্ব যেমন অর্থহীন অনূরুপ নারী ব্যতীতও পুরুষের জীবন নিরর্থক। মূলত পুরুষের অস্তিত্ব, বংশ বৃদ্ধি ও বংশ রক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব-কর্তব্য নারী শ্রেণির উপর অর্পিত। আদি পিতা আদম (আ.) ও আদি মাতা হাওয়া (আ.) ছাড়া জগতের সকল মানুষই নারীগর্ভে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। ঈসা (আ.)-এর মাতা মারিয়াম (আ.) ব্যতীত জগতের কোনো নারীই পুরুষের মিলন ছাড়া মাতৃত্বের সুমহান মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। অল্প কথায়, নারী-পুরুষ উভয়ের মিলনেই মানবজাতির বংশ পরস্পরা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। উভয়ের পারস্পরিক এ পবিত্র সুসম্পর্কের প্রতি কুরআন মাজীদে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘আর তাঁর নির্দশনাবলির মধ্য হতে তোমাদের স্ত্রীদের কে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তার নিকট [আত্ম-প্রশান্তিসহ] বসবাস করতে পার। আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নি:সন্দেহে এগুলোর মধ্যে চিন্তাশীলগণের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’(সূরা আর-রূম : ২১)
পরিশেষে এ সিন্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, নারী-পুরুষের যৌথ মিলনের ফসল হচ্ছে পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতি। এতে উভয় প্রকারের ভূমিকা সমান। একজনের ভূমিকা অন্যজনের ভূমিকার চেয়ে নগণ্য মনে করা সম্পূর্ণরূপে জুলুম বা অন্যায়।
ইসলাম-পূর্বে যুগে নারীর অধিকারঃ
ইসলাম-পূর্ব যুগে সমাজে নারীর কোনো সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। এমনকি মানবজাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও তাদের ছিল না। উল্লিখিত যুগে কারো কোনো কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে ঘৃণায় ও লজ্জায় পিতা জীবন্ত কবরস্থ করত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- ‘জীবন্ত মাটিতে প্রোথিত কন্যা সন্তানদেরকে কিয়ামতের দিন যখন জিজ্ঞেস করা হবে যে, কোন অপরাধে তাদেরকে হত্যা করা হলো? (সূরা আত-তাকবীর:৯)
ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীদেরকে শুধুমাত্র ভোগের সামগ্রী হিসেবে গণ্য করা হতো। যদ্দরুণ তাদের সাথে যা তা ব্যবহার করা হতো। পুরুষদের মতো তারা পিতামাতা বা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তির অধিকারিণী হওয়া থেকেও বঞ্চিত করা হত। পিতাহীন সুন্দরী-ধনবতী বালিকার অভিভাবক যথাযথ মোহর দানে তাকে বিবাহ দিতে সম্মত হত না। আবার অন্যত্র বিবাহ দিতেও অসম্মতি প্রকাশ করত। মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কতিপয় সুন্দরী বাঁদি দ্বারা দেহ ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করত। এহেন গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহতা‘য়ালা কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেন- ‘তোমরা দুনিয়ায় ধন-সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদের যুবতি রমণীদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে না, যখন তারা পাপ মুক্ত থাকতে চায়।’(সূরা আন-নুর : ৩৩)
উল্লিখিত যুগে একের অধিক নারী বিবাহ করে তাদের ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত করা হত। তাদেরকে তালাক দিয়ে অন্যত্র স্বামী গ্রহনের অবকাশও দেওয়া হতো না। এ জাতীয় অমানবিক ও অমানসিক জুলুম-অত্যাচার নারী জাতির উপর করা হত।
বর্তমানে অনৈসলামিক বিশ্বে নারীর অধিকার বা মর্যাদা
বর্তমান অনৈসলামিক বিশ্বে আধুনিক সমাজেও নারীর যথাযথ অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও ন্যায়সঙ্গত অধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আবার কোথাও নারীমুক্তি ও প্রগতির নামে তাদের সামর্থ্যরে বাইরে এবং প্রকৃতির সাথে বে-মানান ও অশোভনীয় দায়িত্ব-কর্তব্যের অসহনীয় বোঝা তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। অল্প কথায়, নারী কে মর্যাদা দানের পরিবর্তে নারীজাতির প্রতি অমর্যাদা ও অবমাননাই আরোপ করা হয়েছে।
অন্য ধর্মে নারীর অবস্থানঃ বিভিন্ন ধর্মে নারীর অবস্থানকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
১. হিন্দুধর্মে- নারীকে বলি দেওয়া হতো। স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্ত্রীকে জীবন্ত অগ্নিতে জীবন বিসর্জন দিতে বাধ্য করা হতো।
২. বৌদ্ধধর্মে- নারীরাই সকল পাপের জন্য দায়ী।
৩. ইহুদিধর্মে- নারীদের গুণের চেয়ে পুরুষের দোষও ভালো।
৪. খ্রিষ্টধর্মে – নারীরাই নরকের দ্বার।
৫. গ্রীসধর্মে – নারীরাই হলো শয়তানের প্রতিভূ।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
১. ইসলামে নারীর যথাযোগ্য অধিকারঃ প্রাচ্য-প্রতীচ্য, আরব-অনারব নির্বিশেষে, পৃথিবীর সকল জনপদে যখন নারী নির্যাতন – নিপীড়ন এবং নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সম্ভ্রম হরণের এক তা-বলীলা চলছিল, তখন মহান রাব্বুল আলামীন বিশ্বনবী (সা.) – কে রহমত স্বরূপ এ ধরায় প্রেরণ করে তাঁর উপর ঐশীগ্রন্থ আল-কুরআন অবতরণের মাধ্যমে চিরবঞ্চিতা ও চরম নিগৃহীতা নারী জাতির মুক্তির বার্তা ঘোষণা ও তাঁর রাসুলের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন।
২.বিবাহের মাধ্যমে নারীকে অধিকার বা মর্যাদা প্রদানঃ জাহিলিয়া যুগে নারীরা পুরুষের ভোগ্য সামগ্রী ছিল। ইসলাম এরূপ ঘৃণিত প্রথা রহিত করে বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্ক স্থাপন করার নির্দেশ প্রদান করে। আল্লাহতা‘আলা বলেন – ‘তোমাদের পছন্দমতো মহিলাদের দু’-দু’জনে, তিন-তিনজন এবং চার-চারজনকে বিয়ে করো। অতঃপর যদি একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে পারবে না বলে আশঙ্কা কর, তবে একজনকে বিয়ে করো। অথবা, তোমাদের খরিদসূত্রে মহিলা দাসীকে গ্রহণ করো; এটাই বে-ইনসাফ না হওয়ার নিকটতম ব্যবস্থা।
(সুরা আন-নিসা-৩)
৩.স্বামী নির্বাচনে স্বাধীনতাঃ পণ্যের ন্যায় হাট-বাজারে বিক্রি হওয়া রমণীরা জাহিলিয়া যুগে নিজেদের ইচ্ছা প্রকাশ করার অধিকার হতে বঞ্চিত ছিল। যখন-তখন তাদেরকে পাত্রস্থ করা হতো। কিন্তু ইসলাম তাদের ইচ্ছামতো স্বামী নির্বাচনের অধিকার দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী – হে, পুরুষরা! তোমরা মহিলাদেরকে স্বীয় স্বামী নির্বাচন করে বিয়ে করাতে বাধা প্রদান করা করো না।
(সুরা আল-বাকারা-২৩২)
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে ‘একবার বিবাহিতা নারী তার নিজের সম্পর্কে বিবেচনায় অভিভাবকের চেয়ে অগ্রাধিকার রাখে। আর অবিবাহিতা যুবতীর কাছে তার পিতা অনুমতি গ্রহণ করবে।
(আবু দাউদ-২০৯৯)
৪.স্ত্রী হিসেবে অধিকার বা মর্যাদা দানঃ ইসলাম -পূর্ব যুগে নারীর স্ত্রী হিসেবে কোনা মর্যাদা ছিল না। ইসলাম নারীকে স্ত্রী হিসেবে সামাজিক মর্যাদা প্রদান করছে। সংসার জীবনে নারী-পুরুষ পরস্পর সম্পূরক হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন -‘নারীরা তোমাদের ভূষণ, আর তোমরাও নারীদের ভূষণ। ( সুরা আল-বাকারা-১৮৭)
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন – সদাচরণের ভিত্তিতে স্ত্রীদের উপর, তোমাদের যেসব দাবী আছে, অনুরূপ তাদের জন্যেও ঐসব দাবি আছে। বস্তুত তাদের উপর পুরষদের একটি বিশেষ মর্যাদা আছে।’ (সুরা আল-বাকারা-২২৮)
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে ‘তোমাদের উপর তাদের দাবি রয়েছে যে, তোমরা সুন্দর ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের খোরপোশ দেবে’। (সহীহ ইবনে হিব্বান-১৪৫৭)
৫.সহবাসের অধিকারঃ ইসলাম আগমনের পূর্বে মেলামেশায় নারীর কোনো অধিকার ছিল না। স্ত্রীর কষ্ট হওয়ার কারণে ঋতুস্রাব অবস্থায় কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে সহবাস নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়, লোকে তোমাকে ঋতুস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বলো, ‘তা অশুচি।’ সুতরাং তোমরা ঋতুস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গম বর্জন করবে। (সুরা আল-বাকারা-২২২)
মহর দানের মাধ্যমে অধিকার দানঃ ইসলাম শুধু বৈবাহিক সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি; বরং নারীকে একটি সম্মাজনক মহর প্রদানেরও নির্দেশ দিয়েছে। যেভাবে পবিত্র কুরআন এসেছে ‘স্ত্রীদেরকে তাদের প্রাপ্য মহর অকপটে খোলা মনে দিয়ে দাও’। (সুরা আন-নিসা- ৪)
৬.সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকার দানঃ জাহিলিয়া যুগে নারীগণ পুরুষের করুণার পাত্র ছিল। কিন্তু ইসলাম স্বামীদেরকে স্ত্রীগণের প্রতি সদাচরণ করার আদেশ প্রদান করেছে। স্বামীদেরকে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদাচরণের মাধ্যমে ঘর-সংসার করো। অতঃপর যদি তোমরা তাদেরকে কোনো কারণে অপছন্দ কর, তবে তোমরা তাদের যে বিষয়টি অপছন্দ কর, আশা করা যায় আল্লাহ তাতে মঙ্গল নিহিত রেখেছেন।’(সুরা আন-নিসা- ১৯)
৭.মাতা হিসেবে অধিকার প্রদানঃ ইসলাম পূর্ব যুগে নারীদের মাতা হিসেবে কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না, ইসলামই নারীকে মাতৃত্বের গৌরব ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছে। কুরআনে এসেছে – ‘তোমার প্রভু সিদ্ধান্ত দিয়ছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইবাদত করবে না। মাতাপিতার সাথে সদাচারণ করবে।’
( সুরা আল ইসরা- ২৩)
এক সাহাবী এসে রাসুল সা: কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! খেদমত করবো কার? জবাবে রাসুল (সা.) বলরেন, তোমার মায়ের। এরপর সাহাবী আবারো জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! খেদমত করবো কার? জবাবে রাসুল (সা.) বলরেন, তোমার মায়ের। এরপর সাহাবী আবারো জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! খেদমত করবো কার? জবাবে রাসুল (সা.) বলরেন, তোমার মায়ের। এরপর সাহাবী আবারো জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারপরে মায়ের পরে খেদমত করবো কার? জবাবে রাসুল (সা.) বলরেন, তোমার পিতার!
৮.কন্যা হিসেবে নারীর অধিকারঃ কন্যার মর্যাদার ব্যপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর একটি হাদীস বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বলেছেন, যার তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, সে তাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করলে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করলে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত আছে।
(জামেউত তিরমিযি-১৯১৬)
৯.উত্তরাধিকারের অধিকার দানঃ ইসলাম মিরাস বা উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নারীর জন্য হিস্যা নির্ধারণ করে দিয়ে তাকে পূর্বযুগের প্রবঞ্চনা হতে মুক্ত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন‘ একজন পুরুষের জন্যে দু’জন মহিলার অনুরূপ অংশ। অতঃপর যদি মহিলারা দ’ুয়ের অধিক হয়, তবে তাদের জন্যে ত্যাজ্য সম্পদের দ’ু-তৃতীয়াংশ। আর যদি মহিলা একজন হয়, তবে তার অর্ধাংশ।’( সুরা আন-নিসা-১৭৬)
১০.শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীঃ শিক্ষার মহান অধিকার হতে বঞ্চিত হয়ে, নারীরা অনিয়মতান্ত্রিক পরাধীন জীবনযাপন করত। ইসলাম তাদের হাতে শিক্ষা মর্যাদার কাঠি তুলে দিয়ে তাদের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন- ‘হে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা,মু‘মিন নারীরা যখন তোমার নিকট আসে, তখন তুমি বায়‘আত কর। (সুরা আল মুমতাহিনা-১২) শুধু তাই নয় ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়ের উপরই জ্ঞান অর্জনকে আবশ্যক করে দিয়েছে।
১১.সামাজিক কাজে নারীঃ ইসলাম সামাজিক লেনদেন, ঋণ আদান-প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষ্যের মর্যাদা দিয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন- এবং তোমাদের মধ্যে দু‘জন পুরুষ সাক্ষীকে সাক্ষী করবে, কিন্তু যদি দু‘জন পুরুষ সাক্ষী না পাওয়া যায়, তাহলে সাক্ষীগণের মধ্যে তোমরা একজন পুরুষ ও দু‘জন নারী মনোনীত করবে। (সুরা আল- বাকারা-২৮২)
১২.পর্দার মাধ্যমে অধিকারের স্বীকৃতিঃ ইসলাম নারীর সম্মান-মর্যাদা রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ করে নারীর মান-সম্ভ্রম ইজ্জত হেফাজতের স্থায়ী ব্যবস্থা পর্দা প্রথার প্রবর্তন করেছেন। আল্লাহতা‘আলা ঘোষণা করেছেন- “হে নারীগণ, তোমরা সেকেলে বর্বর যুগের নারীদের ন্যায় রূপ প্রদর্শন করে চলাফেরা করোনা।“ (সুরা আল আহযাব-৩৩)
১৩.অর্থনৈতিক অধিকারঃ ইসলাম নারীদেরকে মহর প্রদান, জীবিকার্জনের সুযোগ দিয়ে এবং পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে অংশীদার করে অর্থনৈতিক অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন- ‘তোমরা পুরুষেরা যা উপার্জন করবে তা তোমাদের থাকবে, আর নারী যা উপার্জন করবে তা তাদের জন্য থাকবে’। (সুরা আন-নিসা-৭)
ইসলামের স্বভাব সম্মত বিধান
ইসলাম আইন কানুন, জীবনাচার নারী-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলাম স্বভাব নির্ধারিত নারীর দায়িত্ব-কর্তব্যের মাঝেই তার দায়- দায়িত্ব নির্ধারণ করেছে এবং বাড়তি কোনো দায়- দায়িত্ব তার উপর চাপিয়ে দেওয়াকে জুলুম হিসেবে গণ্য করেছে। ইসলাম তার ন্যায্য অধিকারসমূহ স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং; তা সুচারুরূপে পালন ও জবাবদিহি করা সমন্ধে সাবধান করে দিয়েছে। ইসলাম সামাজিক জীবনে নারীর অবদানসমূহের যথাযথ মূল্যায়ন করে তাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় আসীন করেছে। সামগ্রিকভাবে ইসলাম নারী সমাজের মুক্তি ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছে। তার প্রতি কৃত সকল প্রকারের অন্যায়-অনাচার বন্ধ করে দিয়েছে। স্বভাব নির্ধারিত তার দায়িত্ব-কর্তব্য বাধাহীনভাবে সম্পাদন করে সমাজের কেন্দ্রীয় চরিত্র মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মানব সভ্যতার উন্নতিতে নিজ ভূমিকা পালন করার উপযুক্ত পরিবেশে সৃষ্টি করে দিয়েছে। অল্প কথায়, স্বভাব সম্মত ধর্ম ইসলাম নারী জাতিকে তার মুক্তি ও কল্যাণ সুনিশ্চিত করেছে।
সংসার জীবনে নারীর ভূমিকা
পূর্বে বলা হয়েছে যে, নর-নারীর যৌথ মিলনের ফলেই মানবজাতি এ পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল। নারী-পুরুষের মিলনে মাতৃগর্ভে সন্তান ধারণ করার পর হতে সংসার জীবনে উভয়ের দায়- দায়িত্ব ও কর্তব্য পৃথক হয়ে যায়। কেননা, আল্লাহতা‘আলা নারী-পুরুষের সাংসারিক জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা নারীকে নারীত্বের উপযোগী স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃজন করেছেন। গর্ভধারণ, স্তন্যদান ও সন্তান লালন-পালন ইত্যাদি সুকঠিন দায়- দায়িত্ব দিয়ে নারীকে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতা‘আলা ঘোষণা করেছেন- ‘মাতা সন্তানকে কষ্টে গর্ভধারণ করল। আবার অত্যন্ত কষ্ট করে তাকে প্রসব করল। মাতা সন্তানকে গর্ভধারণ ও স্তন্যদান বন্ধ করার সময়সীমা হলো ত্রিশ মাস’। (সুরা আল আহকাফ-১৫)৩৩
অর্থাৎ মাতা সন্তান প্রসব করার পর ইমামদের মতবিরোধ অনুযায়ী আড়াই বৎসর বা দুই বৎসর পর্যন্ত স্তন্যদান করবে। স্তন্যদান করার সময়সীমা দুই বৎসর হোক বা আড়াই বৎসর হোক, এ সুদীর্ঘ সময়সীমা পর্যন্ত সন্তানকে দুগ্ধ পান করানোর দায়িত্ব মাতার উপর অর্পিত হয়েছে। সর্বপ্রকারের কষ্ট- ক্লেশ সহ্য করে মাতা উল্লিখিত গুরুদায়িত্ব পালন করে। আল্লাহতা‘আলা নারীকে নর তথা স্বীয় স্বামীর জৈবিক চাহিদা পূরণ, জন্মদান, সন্তানসন্ততি লালন-পালন, গৃহ পরিচালিকা হিসেবে স্বামী, বাড়ি-ঘর, আসবাব সামগ্রী, ঘরের যাবতীয় কার্যাদির ব্যবস্থাপনা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর নর তথা স্বামীকে স্ত্রীর সর্বপ্রকার কার্যাদিতে তার আর্থিক সহযোগিতা ও সহায়তা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন, যাতে স্বামী-স্ত্রীর কাক্সিক্ষত সংসার জীবন সুন্দর ও মধুময় হয়ে গড়ে উঠে। চাই তাদের সংসার কুঁড়ে ঘরের হোক বা সৌধ নির্মিত হোক।
স্ত্রীর উপর স্বামীর অগ্রাধিকার
মানবজাতির বংশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমপর্যায়ের অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও উভয়ের স্বভাব বৈশিষ্টের পার্থক্যের কারণে তাদের দায়- দায়িত্বেরও ভিন্নতা হওয়া স্বাভাবিক এবং যুক্তিসঙ্গত। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীগণকে গৃহপরিচালিকা হিসেবে গৃহের যাবতীয় কার্যাদির সর্বপ্রকার দায়-দায়িত্ব প্রদান করেছেন। আর স্বামীগণকে গৃহিণীর গৃহকর্মে যাবতীয় আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতার দায়িত্ব অর্পণ করার সাথে সাথে গৃহের বাইরের সমুদয় সামাজিক কার্যাদির দায়িত্ব প্রদান করেছেন। যেমন – জুমা ও দুই ঈদের নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, সামাজিক বিচার-আচার করা অর্থাৎ প্রশাসনিক কার্যাদির দায়িত্বও প্রদান করেছেন। তাই স্ত্রীর গৃহকার্যাদির উপর তাকে প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারীও করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন- ‘পুরুষগণ স্ত্রীগণের উপর হাকিম বা প্রশাসনিক’। (সুরা আন-নিসা-৩৪)
অর্থাৎ স্ত্রীগণ সাধারণত ধর্ম ও জ্ঞানের দিক দিয়ে স্বল্পজ্ঞানী হওয়ার কারণে পার্থিব ও ধর্মীয় কার্যাদিতে ভুল করার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় স্বামীগণকে তাদের উপর প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করত তাদের ভুল ত্রুটি সংশোধন করার ব্যবস্থা করে দেন। দ্বিতীয়ত গর্ভকালীন গর্ভধারণের অবর্ণনীয় কষ্ট ক্লেশের সময় তাকে তার স্বভাবগত ও বৈশিষ্ট্যগত দায়িত্বের অতিরিক্ত পুরুষদের পাশাপাশি দায়িত্ব-কর্তব্যে নিযুক্ত করা তার উপর নির্মম অত্যাচার বৈ আর কিছুই নয়। তৃতীয়ত প্রসবের পর দুগ্ধ পান করানোর সময় বিশেষ করে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ভূমিষ্ঠ সন্তানের থেকে যে অবস্থায় তাকে মুহুর্তের জন্যও দুরে থাকা উচিত নয়, সে অবস্থায় তাকে অসুস্থ ও অপবিত্র পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা অবশ্যই তার সাথে অমানবিক আচরণ হবে। চতুর্থত, নারী জাতির নারী সুলভ শারীরিক আকৃতির কারণে সাধারণত তারা পুরুষদের নিকট লোভনীয় ও কামনার পাত্র হয়ে থাকে। তা ছাড়া পুরুষদের সাথে কর্মসংস্থানের সর্বত্র সমভাবে দায়িত্ব-কর্তব্যে নিযুক্ত থাকলে তাদের শালীনতা ও নারী মর্যাদা ক্ষুণœ হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে নারীদের মর্যাদা রক্ষার্থে রাসূলে কারীম কে সম্বোধন করে বলেন – ‘হে রাসূল! আপনি ঈমানদার পুরুষদেরকে বলে দিন যেন তারা তাদের দৃষ্টি অবনত করে চলে, আর তাদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে, তা তাদের অত্যন্ত পবিত্রতার কাজ হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহতা‘আলা তারা যা করে সে সম্বন্ধে উত্তমরূপে খবর রাখেন। আর আপনি ঈমানদার মহিলাদেরকেও বলে দিন যেন তারা নিজের দৃষ্টিসমূহ অবনত করে চলে, লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে, নিজেদের সৌন্দর্য যেন প্রকাশ না করে। তবে হ্যাঁ যা [সাধারণত] প্রকাশিত হয়ে থাকে। (সুরা আন-নুর-৩০)
নারী প্রগতিতে ইসলামের পর্দাপ্রথা অন্তরায় কিনা-
ইসলাম শুধুমাত্র নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি; বরং নারীর মর্যাদা রক্ষার যাবতীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। যেমন-অনিবার্য কারণ ব্যতিরেকে পর-পুরুষের সাথে বাক্যালাপের অনুমোদনও দেয়নি। আবার অনিবার্য পরিস্থিতিতে বাক্যালাপ করতে হলে কোমল মধুর স্বরে এবং আর্কষনীয় ভাব-ভঙ্গি সহকারে করতে পারবে না; বরং রুক্ষ ও কর্কশ স্বরে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারণ, সাধারণ মহিলা তো দূরের কথা, স্বয়ং রাসূলে কারীম (সা.) এর স্ত্রীগণ যেখানে সাধারণ উম্মতের মাতৃতুল্য, আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন- ‘আর তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মতো।’(সূরা আল-আহযাব : ২৩) তাঁদেরকেও একান্ত প্রয়োজনে পর-পুরুষের সাথে কথা বলতে হলে কোমল ও মধুর স্বর এবং আকর্ষণীয় ভাব-ভঙ্গি পরিহার করে স্পষ্ট ও কর্কশ স্বরে কথা বলার জন্য বলা হয়েছে। কেননা, আকর্ষণীয় ভাব-ভঙ্গিপূর্ণ আলোচনায় মানুষ হিসেবে দুর্বল ঈমানদারের অন্তরে নবীর স্ত্রীর প্রতিও কামনা ও লোভনীয় ভাবের উদ্রেক হতে পারে। এজন্য সম্ভাবনাময় অবমাননাকর পথ প্রথম থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে রাসূলের স্ত্রীগণকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়ে প্রাথমিক যুগের মূর্খতার ন্যায় নিজ সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করে ঘুরাফেরা করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহতা‘আলা ঘোষণা করেছেন- ‘ হে নারীগণ, তোমরা সেকেলে বর্বর যুগের নারীদের ন্যায় রূপপ্রদর্শন করে চলাফেরা করো না’। (সুরা আল আহযাব-৩৩)
এ সকল বাধা-নিষেধ ও কড়াকড়ির মূল কারণ হচ্ছে, মানবজাতির ভবিষ্যৎ বংশরক্ষার লক্ষ্যে আল্লাহ তা‘আলা নারীর শারীরিক গঠন আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তাকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে পুরুষত্ব সম্পন্ন একজন পুরুষ নারীর প্রতি আকৃষ্ট ও দুর্বল না হয়ে পারে না। কেননা আগুনের স্পর্শে যেরূপ মোম বিগলিত হয়ে যায়, তদ্রুপ পুরুষের স্পর্শেও নারীর নারীত্ব প্রকাশিত হয়ে যায়। তবে শর্ত হলো, তা হতে হবে পবিত্র বন্ধন তথা বৈবাহিক সম্পর্কে মাধ্যমে। কাজেই নারী অনিবার্য কারণবশত পর্দার সাথে স্বামী অথবা মাহরামের সাথে ঘরের বাইরে যেতে পারে। তা ছাড়া প্রয়োজন ব্যতিরেকে হাটে-বাজারে, পার্কে ও সভায় মঞ্চে নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বাধাহীন চলাফেরা এবং পর-পুরুষের সাথে মেলামেশা স্বভাবসম্মত ধর্ম ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা, এ সকল নির্লজ্জভাবে চলাফেরা, বাধ্য-বাধকতাহীন অবাধে ঘুরাফেরার সুযোগ ছিনতাই, অপহরণ ও ধর্ষণের মতো জঘন্য অপকর্ম তথা যাবতীয় পাপাচার প্রতিনিয়ত ঘটছে।
উপসংহার
সুষ্ঠ বিবেক-বিবেচনায় ও ভদ্রোচিত মাপকাঠিতে ইসলামের পর্দা প্রথা নারী প্রগতির অন্তরায় তো নয়ই; বরং নারী মর্যাদার রক্ষা কবচ। কারণ আল্লাহ তা‘আলা নারী পুরুষ উভয়েরই সৃষ্টিকর্তা। পৃথিবী আবাদ করা এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এখানে বাস করার সুযোগ তিনিই সকলকে দান করেছেন। উভয়ের চলার পথকে তিনিই আলাদা করে দিয়েছেন। তাঁর মহান সৃষ্টিনৈপুণ্যের মাঝে কোনো ধরনের খোদাদ্রোহী পাপাচার, কমাচার, অপবিত্র সম্পর্ক সৃষ্টি হোক এবং তা দ্বারা মানব জাতির পবিত্র বংশধারা কলুষিত হোক তা তিনি চান না। তিনি পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে ভালোবাসন। মানব জাতির কাছেও তিনি পবিত্রতাই চান। কাজেই নর নারী উভয়ের চলার পথ ,দায়িত্ব ও কর্তব্য পৃথক করে দিয়ে তিনি মহান আল্লাহ মূলত নারী পুরুষ সকলেরই সর্ববিধ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন।
ড.মুহাম্মাদ আবু ইউছুফ খান
অধ্যক্ষ
তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা